• শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১০ পূর্বাহ্ন

দেশে ভূমিকম্প নিয়ে বড় দুঃসংবাদ দিলেন বিশেষজ্ঞরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : / ১৪ বার
আপডেট শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫

দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে—এমন উদ্বেগজনক সতর্কবার্তা দিয়েছেন দেশি ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদীর ঘোড়াশালকে কেন্দ্র করে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে সারা দেশ কেঁপে ওঠার পর তারা বলছেন, এই কম্পনটি বড় ধাক্কার আগের ‘ফোরশক’ও হতে পারে। সাধারণত বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট-বড় কম্পন বেড়ে যায়—এই ঘটনা তারই ইঙ্গিত হতে পারে বলে মত তাদের।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, প্রায় একশ বছর ধরে দেশে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। অথচ এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

গবেষণা অনুযায়ী, ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ১০০–১২৫ বছর পরপর এবং ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ২৫০–৩০০ বছর পরপর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই হিসেবে ১৯৩০ সালের পর বড় ধাক্কা না আসায় ঝুঁকি বাড়ছে।

তিনি জানান, ১৮৬৯ সালের কাছাড় ভূমিকম্প (৭.৬), ১৮৮৫ সালের বেঙ্গল ভূমিকম্প (৭.১), ১৮৯৭ সালের ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান’ ভূমিকম্প (৮.১) এবং ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প (৭.৬)—এসব বড় দুর্যোগ এ অঞ্চলের অতীতেই ঘটেছে।

আজ শুক্রবারের (২১ নভেম্বর) ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত দেশে ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে—পুরান ঢাকায় তিনজন, নরসিংদীতে দুজন এবং নারায়ণগঞ্জে দেয়াল ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অধ্যাপক আনসারী বলেন, ভূমিকম্পটির স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ২০ সেকেন্ড, আর এই সময়েই ঢাকার বহু ভবনে ফাটল দেখা যায়। তার মতে, বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মাণ করাই এ ধরনের ক্ষতির বড় কারণ। তিনি বলেন, ঢাকায় প্রায় ২১ লাখ ভবন আছে—এসব ভবন দ্রুত পরীক্ষা করে ঝুঁকির মাত্রা চিহ্নিত করা জরুরি। সরকার চাইলে রাজউকের মাধ্যমে ভবন পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারে এবং মালিককে কোড অনুযায়ী নির্মাণের সনদ জমা দিতে বাধ্য করতে পারে।

তার আশঙ্কা আরও ভয়াবহ—ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে যদি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে এক থেকে তিন লাখ মানুষের প্রাণহানি হতে পারে এবং শহরের প্রায় ৩৫ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। এজন্য ভবনগুলোকে সবুজ (নিরাপদ), হলুদ (সংস্কারযোগ্য) ও লাল (তাৎক্ষণিক খালি করা প্রয়োজন)—এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান রুবাইয়াত কবির বলেন, বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান ও ইউরোশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলে হওয়ায় স্বভাবগতভাবেই ভূমিকম্পপ্রবণ। আসাম ফল্ট, ডাউকি ফল্ট এবং মিয়ানমারের সেগাইং ফল্ট—এই তিন বড় চ্যুতি রেখা বাংলাদেশের আশপাশেই অবস্থিত।

তিনি জানান, ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ শুরুর পর ঢাকার কাছে ৫.৭ মাত্রার এটাই সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। বড় ভূমিকম্পের পর আফটারশক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি। এ ছাড়া রুবাইয়াত কবিরও ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মানার ওপর জোর দেন।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরোও

Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930