নবী কারীম (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। যে-ই তাঁর সংস্পর্শে গিয়েছে তাঁর আচরণে মুগ্ধ হয়েছে এবং তাঁর মহৎ চরিত্রের প্রশংসা করেছে। শিশুদের প্রতি ছিল নবী কারীম (সা.)-এর অকৃত্রিম স্নেহ ও ভালোবাসা। শিশুদের সাথে তাঁর আচরণ ছিল উপভোগ্য ও অনুসরণীয়। আসুন, শিশুদের সাথে নবী কারীম (সা.)-এর সেসব আখলাকের চমকপ্রদ কিছু দৃশ্য উপভোগ করি এবং নিজেদের জীবনে তা গ্রহণ করার চেষ্টা করি।
প্রিয় নবী (সা.) শিশুদের খুব আদর-স্নেহ করতেন। অন্যদেরকে তাদের প্রতি কোমল আচরণের নির্দেশ দিতেন। তাদের সাথে দয়া ও সহানুভূতির আচরণের উপদেশ দিতেন। যারা শিশুদের সাথে দয়ার আচরণ করে না তাদের ভর্ৎসনা করতেন। তিনি বলেছেন, যে আমাদের ছোটদের প্রতি রহম করে না এবং আমাদের বড়দের অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সুনানে আবু দাউদ-৪৯৪৩)
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একদা নবী কারীম (সা.) তাঁর নাতি হাসান (রা.)-কে চুমু খেলেন। আকরা ইবনে হাবিস (রা.) পাশে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, আমার দশটা সন্তান। একজনকেও আমি কখনো চুমু দিইনি। নবী কারীম (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, নিশ্চয় যে দয়া করে না তার প্রতিও দয়া করা হবে না। (সহিহ বুখারী-৫৯৯৭)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক বেদুইন সাহাবী নবী কারীম (সা.)-এর নিকট এসেছে। [নবী কারীম (সা.) এক শিশুকে চুমু দিলে] সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি শিশুদের চুমু খান? উত্তরে নবীজী বললেন, হ্যাঁ। সে বলল, আমরা তো শিশুদের চুমু দিই না। একথা শুনে নবী কারীম (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমার দিল থেকে রহম ছিনিয়ে নিলে আমার কী করার আছে! (সহিহ বুখারী-৫৯৯৮)
নবী কারীম (সা.) শিশুদের খুব আদর করতেন। তাদের চুমু খেতেন, কোলে তুলে নিতেন। ইয়ালা ইবনে মর্রা (রা.) বলেন, কিছু সাহাবী নবী কারীম (সা.)-এর সাথে দাওয়াত খেতে বের হলেন। হঠাৎ দেখা গেল হুসাইন রাস্তায় খেলা করছে! নবী কারীম (সা.) সবার সামনে এগিয়ে গেলেন এবং তাকে কোলে নেয়ার জন্য উভয় হাত তার দিকে প্রসারিত করলেন। এ দেখে হুসাইন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি আরম্ভ করল। তখন নবীজী তাকে (ধরার জন্য এটাসেটা বলে) হাসাচ্ছিলেন। অবশেষে তাকে ধরে ফেললেন।
এরপর তিনি এক হাত তার থুতনির নিচে রাখলেন, আরেক হাত মাথার পিছনে রাখলেন। তারপর তার মাথাকে নিচু করে তার মুখে মুখ রেখে চুমু খেলেন এবং বললেন, হুসাইন আমা হতে, আমি হুসাইন হতে। (অর্থাৎ আমাকে যে ভালোবাসে সে হুসাইনকেও ভালোবাসবে; হুসাইনকে ভালোবাসা মানে আমাকে ভালোবাসা) যে হুসাইনকে মহব্বত করে আল্লাহ তাকে মহব্বক করুন। হুসাইন আমার (প্রধান) দৌহিত্র। (তার মাধ্যমেই আমার বংশের বড় অংশের বিস্তৃতি ঘটবে)। (সুনানে ইবনে মাজাহ-১৪৪)
শিশুদের প্রতি নবী কারীম (সা.)-এর দয়া-মায়া ছিল অপরিসীম। শিশুদের তিনি আদর করতেন, স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিতেন। কখনো মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতেন। কখনো আবার চিবুক বা গ-দ্বয় ধরে আদর করতেন। জাফর (রা.) মূতার যুদ্ধে শহীদ হলে তার শোকাহত পরিবারের খোঁজ-খবর ও সান্ত¦নাদানের জন্য নবী কারীম (সা.) জাফর (রা.)-এর বাড়িতে যান। তার পরিবারের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন এবং তার সন্তানদের আদর করেন, স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেন।
জাফর (রা.)-এর ছেলে আব্দুল্লাহ (রা.) বড় হয়ে সে মধুর স্মৃতি বর্ণনা করেছেন এভাবে রাসূলে কারীম (সা.) এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন এবং আমাদের জন্য দুআ করলেন, হে আল্লাহ! আপনি নিজেই জাফরের সন্তানদের অভিভাবক হয়ে যান। (মুস্তাদরাকে হাকেম-১৩৭৯) আব্দুল্লাহ ইবনে সা‘লাবা (রা.) হিজরতের চার বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। মুসআব ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহ.) বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর আব্দুল্লাহ ইবনে সা‘লাবাকে নবী কারীম (সা.)-এর নিকট আনা হলো। তিনি তার চেহারায় হাত বুলিয়ে দেন এবং তার জন্য বরকতের দুআ করেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম, বর্ণনা-৫২১৫)
জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, আমি রাসূলে কারীম (সা.)-এর সাথে ফজরের নামায পড়লাম। নামাযের পর তিনি বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। আমিও তার সাথে বের হলাম। কয়েকজন শিশু তাঁর সামনে এসেছে। তিনি একজন একজন করে প্রত্যেকের গ-দ্বয়ে কোমল স্পর্শ দিলেন। আমার গালেও পবিত্র হাতের শীতল স্পর্শ দান করলেন। তাঁর হাত থেকে তখন এমন শীতলতা ও সুঘ্রাণ পেয়েছি, (মনে হলো) যেন এইমাত্র তাঁর হাত তুলে এনেছেন আতরওয়ালার পাত্র থেকে। (সহিহ মুসলিম-২৩২৯)