ময়মনসিংহ নগরে ইয়াসিন আলী (৩৫) নামের বিএনপির এক কর্মীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার ভোরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর মৃত্যু হয়।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরের গন্ড্রপা মোড়ে নিজ দোকানে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন ইয়াসিন।
ইয়াসিন নগরের গন্ড্রপা এলাকার বাসিন্দা ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে দলে তাঁর কোনো পদ নেই। তিনি ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রোকনুজ্জামান সরকারের সঙ্গে ঘোরাফেরা করেন বলে জানান স্বজনেরা। পাশাপাশি তিনি আনন্দ মোহন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার রোলে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
স্বজনদের দাবি, একটি হত্যা মামলা প্রত্যাহার করাতে রাজি না হওয়ায় ইয়াসিনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। একই এলাকার দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিলীপের (৩৬) নেতৃত্বে তাঁর ওপর এ হামলা হয়েছে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনেরা জানান, গতকাল রাত ৯টার দিকে গন্ড্রপা মোড়ে ইয়াসিনের নিজের ফেক্সিলোড ও কসমেটিকসের দোকানে একদল দুর্বৃত্ত হামলা করে। এ সময় তাঁকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত ও কোপাতে শুরু করে দুর্বৃত্ত দলটি। একপর্যায়ে ইয়াসিনের চাচাতো ভাই আমির হোসেনকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে ইয়াসিন মারা যান। আমির এখনো চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ২০২২ সালের ১ জুলাই লুডুখেলা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে ইয়াসিনের প্রতিবেশী চাচা পারভেজ মঞ্জিলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় দেলোয়ার ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ইয়াসিনের চাচা সাদ্দাম হোসেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন এবং আসামিরা জামিনে আছেন।
ইয়াসিনের চাচাতো ভাই আকরাম হোসেন বলেন, ওই মামলার মূল অভিযুক্ত দিলীপ গতকাল সন্ধ্যার পর ইয়াসিনের দোকানে গিয়ে পারভেজ হত্যা মামলাটি তুলে নিতে সাদ্দামকে চাপ দেওয়ার পরামর্শ দেন। এটি তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় জানিয়ে জবাব দেন ইয়াসিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেখান থেকে চলে যান দিলীপ। পরে রাত ৯টার দিকে ৮-১০ জন নিয়ে ইয়াসিনের দোকানে গিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায় দেলোয়ার। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইয়াসিনকে গুরুতর জখম করা হয়।
পারভেজ হত্যা মামলার বাদী ও ইয়াসিনের চাচা সাদ্দাম হোসেন বলেন, মামলা করার পর থেকেই নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন দিলীপ ও তাঁর সহযোগীরা। আমি দুইবার থানায় জিডি করে আদালতকে জানিয়েছি। গতকাল আমার ভাতিজা ইয়াসিনকে মামলা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে চাপ দেওয়া হয়। এ নিয়ে দুই ভাতিজাকে কোপালে একজনের মৃত্যু হয়। আসামিরা জামিনে বের হতে না পারলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটত না।
ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত দোলোয়ার পলাতক আছেন। অভিযোগের বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে দলীয় সম্পৃক্ততার কথা জানতে ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রোকনুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম খান বলেন, কী কারণে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে রাখা হয়েছে।