ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২৭৮ কিলোমিটার। বর্তমানে যাতায়াতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা, যেখানে এক বছর আগেও এই পথ পাড়ি দিতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগত। মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজে ধীরগতি, অর্ধসমাপ্ত প্রকল্প এবং বিক্ষিপ্ত নির্মাণকাজের কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা বেড়েছে। শুধু সড়ক নয়, রেল এবং আকাশপথেও সিলেটবাসীর দুর্ভোগ চরমে।
সিলেট নগরীর মীর্জাজাঙ্গাল এলাকার ব্যবসায়ী সাইকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হচ্ছে না। ছয় লেনের কাজও চলছে বিক্ষিপ্তভাবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঢাকা যেতে লেগেছে ৯ ঘণ্টা, আসার সময় লেগেছে ১০ ঘণ্টা। ফেব্রুয়ারিতে ১৩ ঘণ্টায় সিলেট পৌঁছেছি। রাজধানীর সাথে যোগাযোগব্যবস্থা যদি এমন হয়, তাহলে সিলেটবাসী কীভাবে চলবে?
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা হোসাইন সুজাদ জানান, সড়কে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। রেলপথেও উন্নতির ছোঁয়া নেই। লক্কড়ঝক্কড় ট্রেন বনেবাদাড়ে বিকল হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রেনের টিকিট পাওয়া কঠিন, আর পেলেও ট্রেন সময়মতো ছাড়ে না। নতুন বিরতিহীন ট্রেন টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস চালুর ঘোষণা এলেও সেটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
যোগাযোগব্যবস্থায় সিলেট বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, সিলেটের অধিবাসী ও প্রবাসীরা বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মি। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত ফ্লাইট দেওয়া হয় না। নিয়মিত চলা সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটের ফ্লাইটও এখন বন্ধ। অভ্যন্তরীণ রুটেও ইচ্ছামতো টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়।
গত ২২ ফেব্রুয়ারির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেদিন ইউএস বাংলার সিলেট-ঢাকা ফ্লাইটের ভাড়া ছিল ১৯ হাজার ৪০ টাকা এবং ঢাকা-সিলেট ভাড়া ২১ হাজার ৮৬০ টাকা। একই দিনে নভোএয়ারের সিলেট-ঢাকা টিকিটের মূল্য ছিল ২১ হাজার ৬৫০ টাকা। ৭ হাজার টাকার নিচে টিকিট পাওয়া যায় না। অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ভাড়া প্রায় অর্ধেক। এমনকি আন্তর্জাতিক রুট ঢাকা-কলকাতার টিকিটও ১০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা আইনজীবী মঈনুল হক বলেন, দেশের অন্যান্য বিমানবন্দর সংযোগ সড়কগুলো ছয় বা চার লেনে উন্নীত হয়েছে, কিন্তু সিলেট এখনও বঞ্চিত। পর্যটনসমৃদ্ধ জেলা হওয়া সত্ত্বেও এখানকার সড়ক অবকাঠামো নাজুক। বন্যার কারণে আঞ্চলিক সড়কগুলোর অবস্থা আরও করুণ।
ঢাকা-সিলেট ছয় লেন মহাসড়ক প্রকল্পের ম্যানেজার দেবাশীষ রায় জানান, ২০২৩ সালের মার্চে গৃহীত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের বাজেট প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ বড় চ্যালেঞ্জ হলেও
তা অতিক্রম করা হচ্ছে, এবং আশা করা হচ্ছে, কাজ আরও গতি পাবে।
রেলের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। অনলাইনে টিকিট বুকিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও চাহিদা বেশি থাকায় সংকট দেখা দিচ্ছে। টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস নামে নতুন ট্রেন চালুর বিষয়ে এখনও কোনো দাপ্তরিক নির্দেশনা পাইনি।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া জানান, সিলেটের অভ্যন্তরীণ রুটে টিকিটের উচ্চমূল্যের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা করা হচ্ছে।